বাংলাদেশ থেকে কানাডা যাওয়ার খরচ কত? আসল সত্য জানুন!
অস্ট্রেলিয়া ভিসা আবেদন: সহজ এবং দ্রুত প্রক্রিয়াকানাডা, বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় একটি দেশ। যেখানে প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীরা পাড়ি জমাচ্ছেন। কিন্তু অনেকের মনেই প্রথম যেই প্রশ্নটি আসে, সেটি হলোঃ “কানাডা যাওয়ার খরচ কত?” এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে আপনি কোন ধরণের ভিসার জন্য আবেদন করছেন (স্টুডেন্ট, ওয়ার্ক পারমিট বা ট্যুরিস্ট) সেটির ওপর।
এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিতভাবে জানবো বাংলাদেশ থেকে কানাডা যাওয়ার খরচ, স্টুডেন্ট ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট ভিসার ব্যয়, এবং স্কলারশিপ ও ভিসা প্রসেসিং সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। তাহলে চলুন শুরু করা যাক!
কেন কানাডা?
কানাডা বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ, উন্নত এবং বৈচিত্র্যময় দেশগুলোর মধ্যে একটি। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য উচ্চমানের শিক্ষা, কর্মীদের জন্য স্থায়ী হওয়ার সুযোগ এবং পর্যটকদের জন্য অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। এই সবকিছুই একসাথে একত্রে পাওয়া যায়। এছাড়া কানাডার ইমিগ্রেশন নীতি তুলনামূলকভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ।
কানাডা যেতে কত টাকা লাগে?
কানাডা যেতে আপনার উদ্দেশ্য অনুযায়ী খরচ ভিন্ন হতে পারে। কারণ ভিসার ধরণ অনুযায়ি খরচ ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। এখন আমরা তিনটি প্রধান ক্যাটাগরি অনুযায়ী খরচ সম্পর্কে জানবো। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
এবার আসুন প্রতিটি ধাপের বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানি।
কানাডা স্টুডেন্ট ভিসার খরচ কত?
১. ভর্তি ফি (Application Fee)
প্রতিটি ইউনিভার্সিটির আবেদন ফি ১০,০০০ - ২০,০০০ টাকা। তবে কিছু ইউনিভার্সিটি রয়েছে যারা ভর্তি ফি মওকুফ করে থাকে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভর্তির আবেদনকালে এই ফি জমা দিতে হয়।
২. টিউশন ফি
কানাডায় ব্যাচেলর বা মাস্টার্স কোর্সের টিউশন ফি বছরে গড়ে ১০ - ২০ লাখ টাকা। এছাড়াও ইঞ্জিনিয়ারিং বা হেলথ সায়েন্সের কোর্স হলে টিউশন ফি আরও বেশি হতে পারে। এছাড়া টিউশন ফি এর বিষয়ে অন্য কোন তারতম্য দেখতে পাওয়া যায় না।
৩. ভিসা আবেদন ফি
কানাডার স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন ফি প্রায় ১২,০০০ - ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে এই বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে আপনি যখন ভিসার আবেদন করবেন সেই সময়। আবেদনকালে এজেন্সির মাধ্যমে সকল তথ্য জানতে পারবেন।
৪. মেডিকেল পরীক্ষা ফি
ভিসা আবেদন করতে মেডিকেল পরীক্ষা আবশ্যক। আর এর খরচ আনুমানিক ৭,৫০০ - ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
৫. জিআইসি (Guaranteed Investment Certificate)
স্টুডেন্টদের কানাডায় প্রথম বছরের খরচ দেখানোর জন্য CAD $10,000 (প্রায় ৮,৫০,০০০ টাকা) GIC হিসাবে জমা রাখতে হয়। যেটা অবশ্যই জমা রাখতে হবে।
৬. ফ্লাইট টিকিট
ঢাকা থেকে কানাডার টিকিটের দাম সাধারণত ১.৫ লক্ষ টাকা থেকে ২.৫ লক্ষ টাকা হয়ে থাকে তবে সিজন ও এয়ারলাইন্স অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। একেক এয়ারলাইন্স এর টিকেট একেকদামে বিক্রি হয়ে থাকে। যার কারণে দামে ও মানে তারতম্য হয়ে থাকে।
৭. অন্যান্য খরচ
উপরের উল্লিখিত খরচ বাদেও আরো বেশকিছু অন্যান্য খরচ রয়েছে। যেমন IELTS পরীক্ষা ফি, সার্ভিস চার্জ, ডকুমেন্ট ট্রান্সলেশন ইত্যাদি। এই সকল আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে অতিরিক্ত আরো প্রায় ৫০,০০০ - ৮০,০০০ টাকা খরচ হয়।
তাই পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশ থেকে স্টুডেন্ট ভিসায় কানাডা যাওয়ার মোট আনুমানিক খরচ প্রায় ২০ - ৩০ লাখ টাকা। যা ১ম বছরের জন্য।
কানাডা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার খরচ কত?
যারা কানাডায় চাকরির জন্য যেতে চান তাদের জন্য ওয়ার্ক পারমিট একটি চমৎকার সুযোগ। এই ভিসার আওতায় তুলনামূলক কম খরচ হয়, বিশেষ করে যদি কোনো নিয়োগদাতা স্পনসর করে থাকে। তাহলে খরচ আরো বেশকিছুটা কমে যায়।
ওয়ার্ক পারমিটের খরচ বিশ্লেষণঃ
এখানে বিভিন্ন ধরণের ভিত্তিতে খরচ হয়ে থাকে। উপরের ছকে উল্লিখিত খরচগুলো দেখতেই পাচ্ছেন। যেখানে ভিসার আবেদন ফ্রি ১২,০০০ - ১৫,০০০ টাকা। মেডিকেল পরিক্ষার ফি রয়েছে আনুমানিক ৭,৫০০ - ১০,০০০ টাকা। আর দেশের বাহিরে যাওয়ার জন্য মেডিকেল করা বাধ্যতামূলক।
এছাড়াও ভিসা প্রসেসিং সার্ভিস/এজেন্সি ফি আনুমানিক প্রায় ১ - ২ লাখ টাকা। এবং ফ্লাইট টিকিটের জন্য আনুমানিক খরচ ১.৫ - ২ লাখ টাকা। তবে এজেন্সি এবং সিজনের ভিত্তিতে খরচ ভিন্ন হয়ে থাকে। তাহলে আমরা বুঝতে পারছি এখানে মোট আনুমানিক খরচ ৪ - ৬ লাখ টাকা।
বিশেষ দ্রষ্টব্যশঃ কিছু ক্ষেত্রে নিয়োগদাতা ফ্লাইট ও প্রসেসিং খরচ বহন করে থাকে, এতে প্রার্থীর খরচ আরও কমে আসতে পারে। তবে এক্ষেত্রে সম্পূর্ণটাই নির্ভর করে নিয়োগদাতার ওপর। অর্থাৎ উক্ত কোম্পানির উপরে।
বাংলাদেশ থেকে কানাডা যেতে কত টাকা লাগে?
সার্বিকভাবে বলতে গেলে, যদি আপনি স্টুডেন্ট ভিসায় যান, আপনার প্রয়োজন হবে ২০-৩০ লাখ টাকা।
আর ওয়ার্ক পারমিট বা চাকরির ভিসার মাধ্যমে যেতে চাইলে ৪-৬ লাখ টাকাই যথেষ্ট হতে পারে। যা আমরা ইতিপূর্বের আলোচনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি।
তবে এছাড়াও ট্যুরিস্ট ভিসার মাধ্যমেও যাওয়া সম্ভব। তবে ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য ২-৩ লাখ টাকায় মোটামুটি ব্যবস্থা করা সম্ভব। তবে এই সব খরচ সময় ও পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে সামান্য পরিবর্তিত হতে পারে।
কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসা হতে সর্বোচ্চ কত সময় লাগে?
কানাডার স্টুডেন্ট ভিসা প্রসেসিং সময় সাধারণত ৮-১২ সপ্তাহ বা ২-৩ মাস। যদি কাজের জটিলতা না থাকে এই সময়ের সময়ের মধ্যেই ভিসা হাতে পাওয়া যায়।
কিন্তু কিছু নির্দিষ্ট সময়, যেমনঃ সেশন শুরুর আগে বা অতিরিক্ত ভিসা আবেদনের ভিড় থাকলে ৩-৪ মাসও লাগতে পারে। তবে এক্ষেত্রে আপনার সকল ডকুমেন্ট সম্পূর্ণ ও সঠিকভাবে জমা দিলে খুব দ্রুতই রেসপন্স পাওয়া সম্ভব। তাই সবসময় সঠিক এবং নির্ভুল তথ্য জমা দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
কানাডায় স্কলারশিপের জন্য কত সিজিপিএ প্রয়োজন?
যদি আপনি কানাডায় স্কলারশিপ পেতে চান, তবে আপনাকে তুলনামূলক উচ্চ একাডেমিক রেজাল্ট দেখাতে হবে। কেননা অনেকেই ভিসার জন্য আবেদন করে থাকেন। তবে সকলের পক্ষেই যাওয়া যম্ভব হয় না। নিম্নে ডিগ্রি লেভেল এবং প্রয়োজনীয় সিজিপিএ উল্লেখ করা হলো।
এছাড়াও স্কলারশিপের জন্য অতিরিক্তভাবে কিছু ডকুমেন্টসের প্রয়জন হয়। সেগুলো হলোঃ
- ভালো রিকমেন্ডেশন লেটার
- স্টেটমেন্ট অব পারপাস (SOP)
- এক্সট্রা-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি প্রমাণপত্র
কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসার সুবিধা ও অসুবিধা
কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসায় যাওয়ার বেশকিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। তাই আমাদেরকে সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধাগুলিও মাথায় রাখতে হবে। তারপরে বিবেচনা করে যেতে হবে। চলুনে জেনে নেওয়া যাক কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসার সুবিধা ও অসুবিধাগুলি কি কি সেই সম্পর্কে।
আরো পড়ুনঃ অনলাইন ইনকাম মোবাইল দিয়ে কিভাবে করবেন
কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসার সুবিধাগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
- বিশ্বমানের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ
- পড়াশোনার পাশাপাশি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজের অনুমতি
- পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশন ওয়ার্ক পারমিট (PGWP) সুযোগ
- স্থায়ী আবাসিকতার (PR) সহজ পথ
- আন্তর্জাতিক কর্মজীবন গড়ার অসাধারণ সুযোগ
কানাডায় স্টুডেন্ট ভিসার অসুবিধাগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ
- উচ্চ জীবনযাত্রার খরচ
- প্রতিকূল আবহাওয়া (বেশিরভাগ এলাকায় অত্যধিক ঠান্ডা)
- সাংস্কৃতিক ভিন্নতা মানিয়ে নিতে সময় লাগে
- স্টুডেন্টদের উপর কিছুটা আর্থিক চাপ
শেষ কথা
বাংলাদেশ থেকে কানাডা যাওয়ার খরচ কত — এই প্রশ্নের উত্তর সরাসরি নির্ভর করে আপনি কোন ধরণের ভিসার জন্য আবেদন করছেন এবং কেমন জীবনযাত্রা পছন্দ করেন তার উপর। স্টুডেন্টদের জন্য ২০-৩০ লাখ টাকা বাজেট করা উচিত, এবং চাকরি প্রত্যাশীদের জন্য ৪-৬ লাখ টাকা যথেষ্ট হতে পারে।
কানাডায় যাওয়ার স্বপ্ন পূরণের জন্য শুরু থেকেই সঠিক পরিকল্পনা, অর্থনৈতিক প্রস্তুতি এবং বিশ্বস্ত তথ্যসূত্র থেকে গাইডলাইন নেওয়া জরুরি।
আপনার যাত্রা শুভ হোক!
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)
১. কানাডার স্টুডেন্ট ভিসার দাম কত?
উত্তরঃ কানাডার স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন ফি প্রায় ১২,০০০ - ১৫,০০০ টাকা (CAD $150)। এর সঙ্গে মেডিকেল, বায়োমেট্রিক ও প্রসেসিং খরচও যোগ হয়।
২. কানাডায় স্টুডেন্ট হিসেবে কত টাকা আয় করা যায়?
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করতে পারে, যার মাধ্যমে গড়ে মাসে CAD $800 - $1,200 (প্রায় ৭৫,০০০ - ১,১০,০০০ টাকা) আয় করা সম্ভব।
৩. কানাডায় মাস্টার্স করতে কত টাকা লাগে?
উত্তরঃ কানাডায় মাস্টার্স করতে টিউশন ফি, বসবাস, ভিসা ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে ২০ - ৩০ লাখ টাকা (BDT) পর্যন্ত প্রয়োজন হতে পারে।
৪. বাংলাদেশ থেকে কানাডা যাওয়ার খরচ কত?
উত্তরঃ আপনি যদি স্টুডেন্ট ভিসায় যান, তাহলে আনুমানিক ২০-৩০ লাখ টাকা লাগবে। ওয়ার্ক পারমিট বা ট্যুরিস্ট ভিসার জন্য খরচ ৪-৬ লাখ টাকা হতে পারে।
৫. কানাডা যেতে কত পয়েন্ট লাগে?
উত্তরঃ কানাডার Express Entry প্রোগ্রামে সাধারণত ৪৬০ - ৫০০ CRS পয়েন্ট লাগতে পারে। তবে প্রদেশভেদে এই পয়েন্ট কম বা বেশি হতে পারে।
৬. বাংলাদেশ থেকে কানাডায় পড়তে কত টাকা লাগে?
উত্তরঃ ব্যাচেলর বা মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য বাংলাদেশ থেকে কানাডা যেতে প্রাথমিকভাবে ২০ - ৩০ লাখ টাকা প্রস্তুত রাখতে হয়।
৭. কানাডার বেতন কত?
উত্তরঃ কানাডায় গড় মাসিক বেতন CAD $3,000 - $5,000 (প্রায় ২.৮ - ৪.৬ লাখ টাকা) পেশা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।
৮. কানাডায় মাস্টার্স করার বয়সসীমা কত?
উত্তরঃ মাস্টার্স করার জন্য নির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই। তবে ৩০-৩৫ বছরের মধ্যে আবেদন করা আদর্শ বলে বিবেচিত হয়। বয়স বেশি হলে অতিরিক্ত প্রমাণ দিতে হতে পারে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url