গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন

খালি পেটে ইসবগুলের ভুষি খেলে কি হয়প্রিয় পাঠক, আপনি জানেন কি গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে। আপনি যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কারণ আজকের এই সম্পূর্ণ আর্টিকেলটিতে আমরা গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
আপনি যদি আজকের এই আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে শেষ পর্যন্ত পড়তে থাকেন তাহলে আপনি গর্ভাবস্থায় খেজুর কখন খেতে হয়, গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার পরিমাণ, গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তাহলে চলুন এখন বেশি দেরি না করে বিস্তারিত আলোচনায় যাওয়া যাক।

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া যাবে কিনা

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া যাবে কিনা এই রকম প্রশ্নে আমরা সকলেই প্রায় কম বেশি ভুগে থাকি। আপনি ও যদি এই এমন কনফিউশানে ভুগে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন। আশা করছি আপনার সকল বিভ্রান্তি দূর হয়ে যাবে।

গর্ভাবস্থায় অবশ্যই খেজুর কাহোয়া যাবে। আদিকালে যখন চিকিৎসা সেবা তেমন একটা ছিলো না, সেই সময়েও গর্ভবতি নারীরা খেজুর খেতেন।

এর সব থেকে বড় কারণ হিসেবে জানা যায় যে, গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে লিভারের পেইন কম হয়। এই কথা অনেকেই মন গড়া কথা ভাবতে পারেন। কিন্তু আপনাদের জানিয়ে রাখি এটি কোন মনগড়া কথা নয়।

বিভিন্ন গবেষকগণও এই একই তথ্যের সাথে একমত পেষণ করেছেন। তারা আরো জানিয়েছেন যে খেজুরে অনেক পরিমাণে ল্যাক্সেটিভ রয়েছে।

যা মেয়েদের জরায়ু সংকোচনে অনেক সহায়তা করে থাকে। আর তার পাশাপাশি এইটি প্রসব শ্রমকে অনেল লাঘব করে। তাই গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া অনেক ভালো। আর অবশ্যই গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া যাবে।

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার সময়

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন সময় নেই। আপনি চাইলে প্রতিদিন সকলে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে ২টা কি ৩ টা খেজুর খেতে পারেন।

আবার আপনি যদি চান দুধের সাথে খাবেন তাহলে সেটাও করতে পারেন। তার জন্য আপনাকে রাতে হালকা গরম দুধে খেজুরের থেকে বিচি বের করে নিয়ে টুকরো টুকরো করে দুধের সাথে মিশিয়ে দিন।

তারপর সকালে উঠে দেখাবেন সেই দুধ হালকা লাল বর্ণ ধারণ করছে আপনি আপনি তখন প্রথমে দুধ থেক খেজুর উঠিয়ে নিয়ে খাবেন।

তারপরে আপনি দুধটুকু খেয়ে নিবেন। আবার আপনি চাইলে যেকোন সময়ে যখন আপনার ইচ্ছা হবে তখন খেতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার পরিমাণ

গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে যে অনেক পরিমাণে উপকারিতা পাওয়া যায় সেই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবো। আর তার সাথে খেজুরের অপকারিতা ও জানতে পারবো। এখন অনেকেই প্রশ্ন করেন যে গর্ভাবস্থায় কতটি করে খেজুর খেতে হবে। চলুন তাহলে এখন এই বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক।

আপনি যখন গর্ভাবস্থায় থাকবেন তখন আপনার শরীরের ভেতরে একজন বেরে উঠে। তখন আপনার শরীরের পাশাপাশি তার শরীরেও অনেক পুষ্টির প্রয়োজন হয়।
এজন্য আপনি গর্ভধারণের শুরুতে প্রতিদিন ৫-৬ টি করে খেজুর খেতে পারেন। তবে খুব একটা বেশি খাওয়ার চেষ্টা করবেন না।

আর আপনি যদি পারেন তো গর্ভাবস্থার শেষের দিকে আসার সময় অর্থাৎ ৭-৮ মাসের সময়ে আপনি প্রতিদিন ৬০-৮০ গ্রাম করে খেজুর খাওয়ার চেষ্টা করুন।

যার ফলে সার্ভিক্স অনেক মজবুত হবে। যার ফলে আপনাকে কৃত্রিমভাবে ঔষধ নিয়ে প্রসব বেথা করার দরকার হবে না। এটি প্রাকৃতীক নিয়মে সাভাবিকভাবেই ঘটে থাকে।

খেজুরের পুষ্টিগুণ

গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে কিকি উপকার হয় তা জানার জন্য আমাদেরকে আগে এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানতে হবে। আপনিযদি এর পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জানেন তাহলে আপনি ও অবাক হবেন। তাহলে চলুন এখন আমরা খেজুরের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে জেনে নেই।

প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে কি পরিমাণ পুষ্টিগুণ রয়েছে তা নিচে ছকের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হলোঃ

পুষ্টি উপাদান

পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ

প্রোটিন

২.৪৫ মিগ্রা

আয়রন

১.০২ মিলিগ্রাম 

এনার্জি

২৮২ ক্যালরি

ফোলেট

১৯ এমসিজি

ফাইবার

৮ গ্রাম

ভিটামিন কে

২.৭ এমসিজি

ম্যাগনেসিয়াম

৪৩ মিলিগ্রাম 

ফ্যাট

০.৩৯ গ্রাম

পটাশিয়াম

৬৫৬ মিলিগ্রাম

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

আমরা সকলেই জানি যে, খেজুর একটি অনেক পুষ্টিকর ফল। যার প্রচলন প্রায় বিশ শতক ধরে প্রচন হয়ে আসছে। আর অনেক মানুষ ব্যাবহার করেও থাকছে।

আমাদের সকলেরই এই গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে রাখা উচিত। তাতে করে অনেক উপকারে আসবে। তাহলে চলুন এখন জেনে নেওয়া যাক।

শক্তির যোগান দেয়

খেজুর হলো হাই একটি হাই প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। যার ফলে মায়ের শরীরে প্রচুর পরিমাণে শক্তির যোগান দিতে পারে।

যেহেতু এই সময়ে স্বাভাবিকের তুলনায় গর্ভবতি মেয়েদের শরীরে অনেক বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়, তাই এই সময়ে খেজুর থেকে খুব সহজেই সেই শক্তি সঞ্চার করা যেতে পারে।

প্রসবকে অনেক সহজ করে

খেজুরে রয়েছে ফাইবার এবং প্রাকৃতিক ল্যাক্সেটিভ। যার ফলে শরীরের কোষ্ঠকাঠিন্য খুব সহজেই দূর করে ফেলে। আর তার পাশা পাশি প্রসব ব্যাথা অনে হ্রাস করতে সক্ষম হয়।

শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

খেজুরে রয়েছে ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শিশুর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতে অনেক গুণে বৃদ্ধি করে থাকে। এই সকল উপাদান গর্ভের শিশুকে অসুস্থ হওয়া থেকে ও অনেক রক্ষা করে থাকে।

শিশুর শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে

খেজুরে আরো অনেক উপাদান রয়েছে। তার মধ্যে আয়রন এবং ক্যালসিয়াম হলো একটি। এই উপাদান গর্ভে থাকা শিশুর ওজন বৃদ্ধি করতে অনেক সহায়তা করে থাকে।

শিশুর "ভিটামিন-কে" এর যোগান দেয়

সকল শিশু জন্মগ্রহণের সময়ে সাধারণত ভিটামিন কে কম পরিমাণে নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।

তাই বাচ্চা গর্ভাবস্থায় থাকা অবস্থায় যদি মা খেজুর খান তাহলে বাচ্চা "ভিটামিন-কে" পর্যাপ্ত যোগান হয়ে যাবে। ফলে বাচ্চা ও অনেক সুস্থ থাকবে।

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার অপকারিতা

আমরা সকলেই ইতিপূর্বেই গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারলাম। প্রতিটি জিনিসেরই দিটি দিক থাকে।

একটি তার ভালো দিক অর্থাৎ উপকারি দিক। আর একটি খারাপ দিক অর্থাৎ অপকারি দিক। খেজুরের এতো সকল উপকারি দিক থাকা সত্ত্বেও কিছুটা অপকারি দিক ও রয়েছে।

সে সম্পর্কে আমাদের সকলকেই একটু মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। তাই আমাদের কে এর অপকারিতা সম্পর্কেও জানা উচিত। তাহলে চলুন এখন আমরা গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার অপকারি দিক সম্পর্কে জেনে নেই।
খেজুরে অনেক পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে। তাই আপনি যদি প্রচুর পরিমাণে খেজুর খেতে ভালোবাসেন তাহলে মোটেও আপনাকে এই অবস্থায় বেশি খেজুর খাওয়া উচিত হবে না।

কারণ তার পাশাপাশি আপনি তো অন্যান্য অনেক খাবার খাবেন । তাতে করে আপনার সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।

স্থুলতা বৃদ্ধিঃ প্রতিদিন আপনি যদি অনেক পরিমাণে খেজুর খেতে থাকেন তাহলে খুব সহজেই আপনার শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। তাতে করে আপনার চলাফেরা করতে অনেক অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে।

ডায়বেটিস বৃদ্ধিঃ যাদের ডায়বেটিস রয়েছে তারা প্রতিদিন স্বাভাবিক মাত্রায় খাবেন। তা না হলে আপনার শরীরে ডায়াবেটিসের পরিমাণ বেরে যেতে পারে। এছাড়াও আপনার শরীরের রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেকটাই বেরে যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া কি নিরাপদ?
হ্যাঁ, সাধারণত গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়া নিরাপদ এবং এটি প্রাকৃতিক শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। তবে পরিমাণে খেতে হবে এবং যাদের ডায়াবেটিস আছে, তাদের সাবধানে খেতে হবে।

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা কী কী?
খেজুরে থাকা ফাইবার, আয়রন ও প্রাকৃতিক চিনি গর্ভবতী মায়েদের শক্তি জোগাতে, কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে এবং রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে।

গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার কোনো অপকারিতা আছে কি?
অতিরিক্ত খেজুর খাওয়ায় ওজন বৃদ্ধি, রক্তে চিনি বেড়ে যাওয়া বা হজমের সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিক মায়েদের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

খেজুর গর্ভবতী নারীদের প্রসব সহজ করে কি?
হ্যাঁ, গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থার শেষ দিকে খেজুর খেলে জরায়ুর সংকোচন স্বাভাবিকভাবে বাড়ে, যা প্রসব সহজ করতে সাহায্য করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় কতটি খেজুর খাওয়া উচিত?
দিনে ৩-৬টি খেজুর খাওয়া নিরাপদ ধরা হয়, তবে ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।

লেখকের মন্তব্য

আজকের আমাদের এই আর্টিকেলটি আপনি যদি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ে থাকেন তাহলে আশা করছি আপনি গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং বুঝতে পেরেছেন।

এই রকম তথ্য বহুল আর্টিকেল প্রতিদিন নিয়োমিত ফ্রীতে পড়তে আমাদের ওয়াবসাইট নিয়োমিত ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url